অরূপ কুমার মাজী, জেএনএফ, ঝাড়গ্রাম :নিজেদের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে জঙ্গলমহলে প্রচারে এসে একে অপরকে জঙ্গলমহলবাসীর আপনজন হিসেবে বোঝানোর চেষ্টা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।২৬এপ্রিল জঙ্গলমহলে সভা করতে এসে ছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।মুখ্যমন্ত্রী সভা করেন ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের গড়বেতা বিধানসভার গড়বেতা হাই স্কুল মাঠে এবং অপরদিকে বিরোধী দলনেতা ঝাড়গ্রাম ব্লকের গজাশিমুল ফুটবল মাঠে সভা করেন।সভা মঞ্চ থেকে জনগণকে কাছে পেতে তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে উভয় নিজেদেরকে জঙ্গলমহলের কাছের মানুষ বলে দাবি করেন।সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়”আগে জঙ্গলমহল অশান্ত ছিল,এখানে রক্ত ঝরতো।এখন জঙ্গলমহল শান্ত আছে ,মানুষ শান্তিতে আছে।আমি সেই শান্তি ফিরিয়ে এনেছি।আপনারা শান্তিতে আছেন আমি শান্তিতে আছি”।তিনি জঙ্গলমহলে বিশেষ করে ঝাড়গ্রামে যে উন্নয়ন মূলক কাজগুলি করেছেন যেমন রাস্তা,লালগড়-নেতাই ব্রিজ, আইটিআই কলেজ, নার্সিং কলেজ, সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল, সব কিছুরই খতিয়ান তুলে ধরেন।তিনি তাঁর বক্তব্যের মাঝখানে বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন”যখন ঝাড়গ্রামে রক্ত ঝরছিল তখন একবারও এসেছিলেন দেখতে ?বেলপাহাড়িতে রক্ত ঝরছিল তখন একবারও এসেছিলেন দেখতে?গড়বেতাতে রক্ত ঝরছিল তখন একবার এসেছিলেন দেখতে ?নয়াগ্রামে রক্ত ঝরছিল তখন একবারও এসেছিলেন দেখতে?লালগড়ে রক্ত ঝরছিল তখন একবারও এসেছিলেন দেখতে ?নেতাই এসেছিলেন দেখতে ? সাঁকরাইল গিয়েছিলেন দেখতে ?আমি ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম।ভয় না পেয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম আর জিতে সবচেয়ে প্রথম আমি ঝাড়গ্রামে আসি আর ঝাড়গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করি।এখানে চাকরি বিনা পয়সায় চাল।বিনামূল্যে রেশন এইসব আমি করে দিয়ে গিয়েছিলাম।মানুষ এখন ভালো আছে আমিও ভাল আছি”।অপরদিকে গজাশিমুলের সভামঞ্চ থেকে বিরোধী দলনেতা সাধারণ মানুষদের আশ্বাস জোগানোর জন্য বিগত দিনে তিনি তৃণমূলে থাকার সময় জঙ্গলমহল জুড়ে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এবং মাওবাদী আমলে মানুষের পাশে থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।তিনি বলেন “অরণ্যসুন্দরী জঙ্গলমহলের ইতিহাস কি ছিল আর কেউ জানুক আর নাজুক আমি অন্তত জানি।১১ সালের আগে এখানে তৃণমূল বলে কোনো বস্তু ছিলোনা।একটা সবুজ পতাকা নিয়ে ঝাড়খন্ড পার্টি ছিলো তার নেতা ছিলেন প্রয়াত নরেন হাঁসদা মহোদয় এবং যিনি খুন হয়ে গিয়েওছিলেন বাবু বোস মহোদয়েরা।অন্য দিকে অধিকাংশ এলাকা লাল ঝাণ্ডার দাপটছিল।এদিনের সভা থেকে তিনি জঙ্গলমহলে মমতা বন্দোপাধ্যায় এর কোনো অবদান নেই তা তিনি বোঝানোর চেষ্টা করে বলেন “মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজনীতি করছেন অনেকদিন।মমতা বন্দোপাধ্যায় ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস কিন্তু তখন জঙ্গলমহলে তৃণমূল কোথাও আসন পাতার জায়গা পায়নি।২০০৯ সালে এখানে ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। অধিকাংশ বুথে ভয়ে কেউ ভোট দিতে যেতে পারেননি। মমতা বন্দোপাধ্যায় এখানে তখন কিছু করতে পারেননি”।২০১০সালের ২১ জুলাইয়ের সভা মঞ্চ থেকে ওই বছরই ৯ আগস্ট লালগড়ে শুভেন্দুকে সভা আয়োজন করার নির্দেশ দেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।সেই নির্দেশ পেয়ে জঙ্গলমহলে মমতা বন্দোপাধ্যায় এর প্রথম সভা করার দায়িত্ব কাঁধে তুলেনেন শুভেন্দু অধিকারী।সেই ইতিহাসের ঘটনাও স্মরণ করিয়ে বলেন “আমি মেদিনীপুরের ছেলে,আমি সেই দায়িত্ব নিয়ে প্রথম ২৭ জুলাই লালগড় ভিডিও হলে প্রস্তুতি সভা করিl ৯ আগস্ট প্রথম তৃণমূলকে জঙ্গলমহলে আমিই প্রবেশ করিয়েছিলাম। জঙ্গলমহল এবং এখানকার মানুষ সম্পর্কে তিনি যে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে চিনিয়েছেন তা বোঝানোর জন্য তিনি বলেন “মমতা ব্যানার্জি এই এলাকা চিনতেন না জানতেন না।জিজ্ঞেস করবেন তো ২০১১ সালে দুলাল মুর্মু ,সুকুমার হাঁসদা যারা ওনার দলের প্রাথী হয়েছিলেন ওনাদের জানতেন কিনা ?ডা: সুকুমার হাঁসদা আড়াই বছর চাকরি বাকি ছিল কার কথায় তিনি চাকরি রেজিগনেশন দিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন জানতেন উনি?একজন কেও চিনতেন না। আমি ১১ সালে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে আপনাদের সাথে নিয়ে এই জঙ্গলমহলে কাজ করেছি” তিনি যে মাওবাদী আমলেও এই এলাকায় আসতেন এবং মানুষের পাশে থাকতেন তার জন্য বলেন “আমি ২০১০সালে মহাষষ্ঠীর দিন দুর্গাপূজায় লালগড়ে এসেছিলাম। ২০১০ সাল্ দীপাবলির দিন সাঁকরাইল চুনপাড়া এলাকার উত্তম মাহাতর দেহ ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে তুলে নিয়ে গিয়ে পোস্ট মর্টেম করিয়ে ওনার বাড়ির লোকের হাতে তুলে দিয়ে ছিলাম। সভামঞ্চ থেকে রাধানগর,সেবায়তন ,নেদাবহড়া ,শালবনি ,নয়াগ্রাম,ধরমপুর,লালগড়,রামগড় তিনি সব জায়গায় খেটে খুঁটে তৃণমূলকে জঙ্গলমহলে প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে দাবি করেন। তিনি জঙ্গলমহলের মানুষের খারাপ সময়েও তাদের পাশে থেকেছেন তা বোঝানোর জন্য নেতাইর ইতিহাস স্মরণ করিয়ে বলেন “আপনার মা ব্যাটারা কোথায় ছিলেন যেদিন নেতাইতে ফুলকুমারী মাইতি ,সরস্বতী ঘোড়াই,দীপালি আদক ,সৌরভ ঘোড়াই ,শ্যামানন্দ ঘোড়াই ,আরতি মন্ডল ,অরূপ পাত্র দের দেহ পড়ে ছিলো।সেদিন শুভেন্দু অধিকারী তুলেছিল ,আপনারা কোথায় ছিলেন? আপনার মা ব্যাটারা কোথায় ছিলেন?কোথায় ছিলেন “? সব শেষে তিনি সভাতে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন “আমি আপনাদের লোক তো। এই সিট টা মোদিজীকে দেবেন তো ?
গত ২৬তারিখ এই ভাবেই ভোট প্রচারে এসে দুজনেই দুজনই নাকি জঙ্গলমহলের মানুষের কাছের মানুষ ,নিজেরা জঙ্গলমহলের দুঃখে দুঃখিত হন এবং তাদের দুঃখে তাদের পাশে থাকেন বলে দাবি করলেন। এই বিষয় নিয়ে বিজেপির জেলা সহ সভাপতি দেবাশিস কুন্ডু বলেন ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়োজনের সময় সবাইকে ব্যবহার করেন প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল সবাইকে ছুড়ে ফেলেন কাউকে যোগ্য সম্মান দেন না। শুভেন্দু দা জঙ্গলমহলের জন্য যা করেছেন বা নেতাইবাসীর জন্য যা করেছেন, শুধু জঙ্গলমহল নয় গোটা রাজ্য জানে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ভোটের জন্য মিথ্যা বাণী প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। মানুষ আগামী দিনে ঠিক রায় দিয়ে দেবে l “অপরদিকে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলেন “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি আজকে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তৃণমূল দলটা সবাইকে নিয়ে চলে ২০১১ সালের সময় শুভেন্দু অধিকারী আমাদের দলে ছিলেন তৃণমূল তখন সঙ্গবদ্ধ ভাবে সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করেছিল জঙ্গলমহলে। এখন যদি সেই আন্দোলনের কৃতিত্ব তিনি একা দাবি করেন এটা ঠিক না। আমাদের নেত্রী আগে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন এখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তিনি জঙ্গলমহল কেন গোটা রাজ্যকেই আজকে উন্নয়নে মুড়ে ফেলেছেন “।