অর্পিতা দাস পাল, জেএনএফ, নয়াগ্রাম : কোচিং ছাড়ায় সর্বভারতীয় চাকরির পরীক্ষায় সফল হলেন ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দা মানস মাহাতো। বছর একত্রিশের মানসের বাড়ি জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের প্রত্যন্ত চাঁদাবিলা গ্রামে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউপিএসসি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে চাকরির পরীক্ষার ফাইনাল মেধা তালিকা প্রকাশ হয়। তাতে মানস মাহাতো দেশের মধ্যে ১৪ তম স্থান অর্জন করেছেন। তার সাফল্যে খুশি ঝাড়গ্রাম জেলাবাসীও। এদিন মানস মাহাতো বলেন,‘আমার বাড়িতে প্রচুর বই রয়েছে। ওই বই পড়ে এবং বিষয়ের উপরে দক্ষতাই আমার সফলতা নিয়ে এসেছেন। বইয়ের বিকল্প নেই। শুধুমাত্র বই এবং ইন্টারনেটের সাহায্যে আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে উর্ত্তীণ হয়েছি। মাত্র দু’নম্বরের জন্য জিওসায়েন্টিস পদে পাইনি। আশাকরি ওখানে ওয়েটিং লিস্টে থাকবো।’ শুধুই কি ইউপিএসসি? না তার আগে মানস সিএসআর নেট এবং রাজ্যের সেট পরীক্ষায়ও উর্ত্তীণ হয়েছে।
মানসের বাড়িতে রয়েছেন খাদ্য দপ্তরের ফুড ইন্সপেক্টর পদ থেকে অবসর নেওয়া বাবা চুনারাম মাহাতো। গৃহবধূ মা গন্ধেশ্বরী মাহাতো। চুনারাম-গন্ধেশ্বরীর তিন ছেলে। সব থেকে ছোট মানস। বড় ছেলে বিদ্যুৎ দপ্তরে এবং মেজ ছেলে হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। ছোট ছেলে মানস স্থানীয় চাঁদাবিলা এসসি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করে ২০০৮ সালে। ২০১০ সালে ঝাড়গ্রাম বাণীতীর্থ হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ফিজিক্স নিয়ে ভর্তি হয়। তারপর ২০১৩ সালে গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে খড়গপুর আইআইটিতে এমএসসিতে ভর্তির সুযোগ পায়। সেখান থেকে ২০১৫ সালে পাশ করে সিএসআর নেট এবং রাজ্যের সেট পরীক্ষায়ও উর্ত্তীণ হয়। তারপর গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিলেও মাঝপথে ওই সিদ্ধান্ত বদল করে। ২০১৯ সালে প্রত্যন্ত চাঁদাবিলা গ্রামে ফিরে আসেন মানস। শুরু করে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি।
অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে চাকরির প্রসঙ্গে মানস বলেন,‘আমি এমএসসিতে জিওফিজিক্সের কোনো পেপার পড়িনি। কিন্তু বিষয়টি ভালো লাগতে আমি নতুন বই কিনে চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়তে শুরু করি। এখানে বিষয়ের দক্ষতা ও গভীরতা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। ২০২৩ সালে কলকাতায় গিয়ে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তারপর ওই পরীক্ষায় পাশ করতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ইউপিএসসি ভবনে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। গতকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছে। তাতে আমি ১৪ তম স্থান অর্জন করতে পেরেছি।’
শনিবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে পৌঁছায় ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুমন সাহু। তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানান সুমন সাহু। সুমন সাহু বলেন,‘সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় কোনরকম কোচিং বা ট্রেনিং ছাড়ায় উনি নিজে এই জায়গায় পৌঁছেছেন। খুবই সরল-সাদাসিধে জীবনযাত্রা। আমাদের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে যে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় পাশ করা যায় তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মানসবাবু। সত্যিই আজ আমারা আপ্লুত, অনুপ্রাণিত হয়েছি। ঝাড়গ্রাম জেলাবাসী হিসেবে, নয়াগ্রামবাসী হিসেবে উনার জন্য গর্ব অনুভব করছি। উনাকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানাতে পেরে ধন্য আমরা।’