ঝাড়গ্রাম : তিনি কুষ্ঠরোগী। তাই তাঁর হাত কেউ ধরত না। এমনকি ফিঙ্গার প্রিন্ট উঠবে না বলে তাঁর আধার কার্ডও তৈরি হয়নি এতদিন। যার ফলে তিনি সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিলেন। তিনি হলেন গুণধর সিং। পঞ্চান্ন বছর বয়সী গুণধর সিং এর বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বীরকাণ্ড গ্রামে। পেশায় তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। জন্ম থেকেই তিনি কুষ্ঠরোগী ছিলেন না। গত ১৮ বছর আগে প্রথম তাঁর কুষ্ঠরোগ ধরা পড়ে। তাঁর হাত-পায়ে কুষ্ঠ হওয়ার ফলে তাঁকে ব্রাত্য করে রাখতেন সমাজের একাংশ। গুণধর সিং বলেন,‘গত ১৮ বছর আমি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত। আধার কার্ড তৈরির জন্য প্রথমে গ্রামীণ স্কুলে দু’বার আধার ক্যাম্প এবং তারপর সাঁকরাইলের বিডিও অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও আধার কার্ড তৈরি করে উঠতে পারিনি। যার ফলে আমি সমস্ত সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলাম।’
সাঁকরাইল ব্লকের দু’জন প্যারা লিগ্যাল ভলেন্টিয়ার কৌশিক ভুঁইয়া ও অনুপম ঘোষ গত ফ্রেবুয়ারি মাসে বীরকাণ্ড গ্রামে সার্ভে করতে যান। সেখানেই গুণধর সিং এর এহেন সমস্যার কথা জানতে পারেন গত ৮ ফ্রেবুয়ারি। আধার কার্ড তৈরি করতে না পারার বিষয়টি প্যারা লিগ্যাল ভলেন্টিয়াররা ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব তথা বিচারক সুনীলকুমার শর্মাকে লিখিত ভাবে জানায়। তারপর ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব বিষয়টি স্থানীয় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন। তারপর দু’জন প্যারা লিগ্যাল ভলেন্টিয়ার গত ২৮ মার্চ তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে যান কেশিয়াপাতা স্টেট ব্যাঙ্ক এই ইণ্ডিয়া শাখায়। সেখানে তাঁর আধার কার্ডের এনরোলমেন্ট যায়। এদিন আধার কার্ডটি বাড়িতে গিয়ে তাঁর হাতে তুলে দেন দু’জন প্যারা লিগ্যাল ভলেন্টিয়ার। হাতে আধার কার্ড পেয়ে খুশি প্রৌঢ় গুণধর সিং। তিনি বলেন,‘আমার কুষ্ঠরোগ থাকার জন্য কেউ আমার আধার কার্ড তৈরি করে দেয়নি। বিনামূল্যে জেলা আইনি পরিষেবা থেকে এই সুবিধা পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। আগামী দিনে সরকারি সুযোগ সুবিধা গুলো পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারব।’