Breaking
23 Dec 2024, Mon

বেলপাহাড়ির চিড়াকুঠিতে ৭৩ জন স্কুল পড়ুয়া সহ ৩৫০ জন লোধা-শবরের হাতে জাতিগত শংসাপত্র তুলে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ!


ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ওয়েব ডেস্ক : সোমবার বেলপাহাড়ির চিড়াকুঠি মাঠে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৭৩ জন স্কুল পড়ুয়া সহ ৩৫০ জন লোধা-শবরের হাতে জাতিগত শংসাপত্র তুলে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক মহিলা সপ্তাহ দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে এক আইনি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা ও দায়রা বিচারক সুতনুকা নাগ, ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব সুনীলকুমার শর্মা, পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডমিনিস্ট্রের জেনারেল ও অফিসিয়াল ট্রাস্টি বিপ্লব রায়, ঝাড়গ্রামের মহকুমা শাসক বাবুলাল মাহাতো, ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপারেশন) উত্তম ঘোষ, বেলপাহাড়ির এসডিপিও উত্তম গরাই, শিমূলপাল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জলেশ্বর সিং, চিড়াকুঠির বিবেকানন্দ আশ্রমের স্বপন মহারাজ, বেলপাহাড়ি থানার আইসি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস প্রমুখ। গত বছর আগস্ট মাসে বেলপাহাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। সেখানে তিনি সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন। সেই সমস্যার সমাধানের জন্য বিচারপতি ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিবকে নির্দেশ দেন। তারপরেই বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে প্যারা লিগ্যাল ভলেন্টিয়ার শ্যামল মিস্ত্রি ও মোহিতকুমার বেজকে দিয়ে সার্ভে করান ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব।

বাড়ি বাড়ি সার্ভে করার পর জানা যায় বেশির ভাগ আদিবাসী ও লোধা-শবর মানুষজনের জন্ম সার্টিফিকেট, জাতিগত শংসাপত্র ও আধার কার্ড নেই। রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার প্রকল্প থাকলেও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন সেখানে গিয়ে তাঁরা সেই সুযোগ সুবিধা নেয়নি। প্যারা লিগ্যাল ভলেন্টিয়াররা প্রতিটি বাড়ি গিয়ে তাঁদের কাগজপত্র সংগ্রহ করে ফর্ম ফিলাপ করে তা ঝাড়গ্রামের মহকুমা শাসকের কাছে জমা দেন। মহকুমা শাসক দ্রুত সেই কাগজপত্র যাচাই করে মোট ১৩৩১ জনের এসটি জাতিগত শংসাপত্র তুলে দেন। তারমধ্যে এদিন ৩৫০ জন লোধা-শবরদের হাতে সেই শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। চিড়াকুঠির ফাগু শবর, গিরান শবর, রিমড়াডাঙার লুস্কি শবর, নেপাল শবর, ধোবাকাঁচার কাজল শবররা জাতিগত শংসাপত্র হাতে খুশি।

ফাগু, লুস্কি শবররা বলেন,‘এতদিন তো আমাদের সার্টিফিকেট ছিল না। বাবুরা ঘরে এসে কাগজ নিয়ে গিয়ে করে দিল। বিনা পয়সায় কাজ করে দিয়েছে।’ অনুষ্ঠানে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ বলেন,‘এতদিন আপানারা গ্রাসরুট লেভেলে পুলিশ-প্রশাসনকে কাজ করতে দেখেছেন। যেমন কোর্ট মানে জর্জরা কোর্টে বসে কাজ করেন। এখানে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন সচিব। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় ন্যাশানাল লিগ্যাল সার্ভিসেস বলে একটি ভাগ রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। বিনামূল্যে আইনি পরিষেবার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করা হয় সেখানে। কিন্তু ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় লিগ্যাল সমস্যা বলতে তেমন চোখে পড়েনি। কিন্তু সত্যিকারের মানুষের মৌলিক অধিকার গুলি, যার মাধ্যমে সে নিজেরা কিছু পেতে পারে সেই কাগজগুলি দেওয়ার জন্য আমরা এখানে ব্যবস্থা করেছি। সার্ভে করে দেখা গেল এখানের মানুষের জন্ম সার্টিফিকেট, জাতিগত শংসাপত্র, আধার কার্ড গুলি নেই। যদিও একাজ গুলি প্রশাসনের। কিন্তু আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম এত কম সংখ্যক অফিসার আছেন এবং এত বেশি সংখ্যক মানুষের ডকুমেন্ট নেই তাই এর মধ্যে একটা ব্রিজ বানানোর কথা আমরা ভাবলাম। তারপর জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মহকুমা শাসকের সাহায্য নিয়ে জাতিগত শংসাপত্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আধার কার্ড তৈরি করা হয়েছে।’

Developed by