কৃষকদের মধ্যে সার বণ্টন নিয়ে বিধায়ক উদয়ন গুহ নির্দেশিত নয়া নিয়মের জেরে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে দিনহাটা পুরসভা চত্বরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকেও। তারপরেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সার কেনার স্লিপ না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পরছেন কৃষকরা।
সম্প্রতি সার নিয়ে কালোবাজারি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দিনহাটা শহরের বিভিন্ন সারের দোকানে হানা তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। সারের দোকানে মালিকদের সাথে কথা বলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে যাতে সার বিক্রি করা হয়, এর জন্য নয়া নিয়ম চালু করেন তিনি। সেই নয়া নিময়ে দিনহাটা পুরসভার থেকে স্লিপ সংগ্রহ করে দোকান থেকে সার কিনতে হবে কৃষককে। এরপর গতকাল থেকে দিনহাটা পুরসভা থেকে সার কেনার স্লিপ ইস্যু করতে শুরু করে। গতকালও শেষ পর্যন্ত অনেকে স্লিপ না পেয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফলে এদিন সার কেনার স্লিপ সংগ্রহ করতে আসা কৃষকদের সংখ্যা বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আর ভিরের জেরেই শুরু হয় ক্ষোভ বিক্ষোভ। পরিস্থতি এক সময় এমন আকার ধারণ করে, যে দিনহাটা পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান গৌরী শঙ্কর মাহেশ্বরীকে পুলিশ ডাকতে হয়। পুলিশ এসে হস্তক্ষেপ করার পরেও বহু কৃষক সারের স্লিপ না পেয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন।
নয়ারহাট এলাকা থেকে আসা কৃষক কবিদুল হক বলেন,“গতকাল এসে লম্বা লাইনে পড়েছিলাম। তাই শেষ পর্যন্ত স্লিপ মেলে নি। আজ আবার আসতে বলা হয়েছিল। ভিড় হবে ভেবে সকাল ৬ টার সময় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কাছাকাছি চলেও এসেছিলাম। কিন্তু আচমকা পুলিশ এসে নতুন করে লাইন করে দেওয়ায় আজও স্লিপ পেলাম না।”
ওকরাবাড়ি এলাকার কৃষক সফিকুল মিয়াঁরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, বাইরে সারের চরা দাম। তাই সরকারী দামে সার পাবো বলে লাইনে দাঁড়িয়েছি। একটা স্লিপ পেয়েছি। আরেকটা দরকার। কি হবে বুঝতে পারছি না।”
দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশংকর মাহেশ্বরী অবশ্য সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, ” সারের আপাতত যা স্টক রয়েছে, তার জন্য স্লিপ দেওয়াও হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় এই কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। একটু হই হট্টগোল হবেই। বড়সড় কোন বিশৃঙ্খলা তো ঘটেনি”।
দিনহাটা শহরে তো বটেই গ্রামীণ এলাকা গুলোতে ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশী আদায় করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে ওই নতুন নিয়ম চালু করেন। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে, একেকজন কৃষকের একেক ধরণের সারের প্রয়োজন। একটা স্লিপে বেশী পরিমাণ সার নিতে গেলে কোম্পানির নিয়মে অন্য সারও নিতে হয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে কৃষক একাধিক স্লিপ সংগ্রহের চেষ্টায় বারবার লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আর এতেই ভিড় ব্যপক আকার নিচ্ছে। কোন কোন কৃষক একাধিক স্লিপ সংগ্রহ করতে পারলেও অনেকেই স্লিপ না মেলায় খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
এক কৃষকের কথায়, “লাইনে দাঁড়িয়ে স্লিপ নিয়ে সার কেনায় একদিন এমনিতেই চলে যায়। আর যদি স্লিপের জন্য প্রতিদিন ঘুরতে হয়, তাহলে দিন গুলো কিভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বুঝুন। এই সময় জমি চাষের জন্য দিনরাত খাটতে হয় কৃষক পরিবার গুলোকে। আর এখন যদি এভাবে দিন নষ্ট হয়, তাহলে কি করে হবে?”