শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রিতে আগ্রহী হওয়ায় ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দিনের জন্মভিটায় স্মৃতি রক্ষায় আশার আলো দেখা দিয়েছে। আজ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের উদ্যোগে তুফানগঞ্জের বলরামপুরে ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দিনের জন্মভিটায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ছাড়াও ভাওয়াইয়া শিল্পী নজরুল ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা হরিপদ দাস, প্রধান নীরেন দাস সহ জমির মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে বৈঠকের পর ৫ কাটা জমি বিক্রি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন মালিক পক্ষ। এরপরেই রবীন্দ্রনাথ বাবু আগামী দুমাসের মধ্যে একটি কমিটি তৈরি করে জমি কিনে নিয়ে সেখানে প্রাথমিক ভাবে শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা, বসার জায়গা নির্মাণের পাশাপাশি জীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা আব্বাসউদ্দিনের ডারি ঘরটিকে (বসার ঘর) সংস্কার করার সিধান্ত নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, আগামী দিনে সেখানে একটি সংগ্রহশালা ও ভাওয়াইয়া চর্চা কেন্দ্র নির্মাণ করে ভাওয়াইয়া সম্রাটের বিভিন্ন স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও রবীন্দ্রনাথ বাবু জানান।
রবীন্দ্রনাথ বাবু বলেন, “আমরা এর আগে বহুবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু জমির মালিক জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের স্মৃতি রক্ষায় সেখানে কোন রকম কাজ করা সম্ভব হয় নি। কিন্তু সম্প্রতি জমির মালিক ৫ কাটা জমি বিক্রি করতে রাজি হয়েছে। তারপরেও এই উদ্যোগ নেওয়া হল।”
ভাওয়াইয়া শিল্পী নজরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ ও অসম থেকে অনেক ভাওয়াইয়া প্রেমী শিল্পী ও সাধারণ মানুষ আব্বাস উদ্দিনের জন্মভিটা দেখতে আসেন। কিন্তু সেই জীর্ণ ডারিঘর ছাড়া আর কিছুই দেখা হয় না তাঁদের। তাই এই উদ্যোগ খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।”
বলরামপুরেই জন্মেছিলেন ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন। সেখানেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা, সেখানে বসেই বিখ্যাত সব গান গেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দেশ ভাগের সময় আব্বাস উদ্দিনের পরিবার জমিজামা বিক্রি করে বাংলাদেশে চলে যান। সেই থেকে শুধুমাত্র আব্বাস উদ্দিনের ডারি ঘর ছাড়া আর কিছুই ছিল না এখানে। এক সময় সেই ডারিঘরটিও জীর্ণ হতে থাকে। তবে ভাওয়াইয়া সম্রাটের ভক্তদের আনাগোনায় সেই ঘরটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয় নি। সেটাই এখন বড় স্মৃতি হয়ে রয়েছে। সেই স্মৃতিকে রক্ষা করার পাশাপাশি সেখানে ভাওয়াইয়া চর্চার একটি কেন্দ্র ও সংগ্রহশালা গড়ে তোলার এই উদ্যোগকে ভাওয়াইয়া প্রেমীরা যে সাধুবাদ জানাবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।