পৃথিবীতে এমন বহু জিনিস সৃষ্টি হয় যা সারা জীবন থেকে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। প্রচারের আলোয় না আসতে পেরে একটা সময় সৃষ্টিকর্তা শিল্পী ও হারিয়ে যায় কালের অতলে। প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও সেইসব সৃষ্টিকর্তারা মূল্যহীন হয়ে দিন যাপন করেন লোকসমাজের নিভৃতে। ঠিক সেই রকমই লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে এক সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ধনের উপর ক্ষুদ্র কালী মূর্তি তৈরি করলেন নবদ্বীপ পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতাপ নগর এলাকার বাসিন্দা গৌতম সাহা। পেশায় তিনি একজন অঙ্কন শিল্পী। মাটি, রং ও আঠার সংমিশ্রণে ক্ষুদ্র এই কালী মূর্তিটি তৈরি করতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় সাত দিন বলে জানান শিল্পী গৌতম সাহা। কিছুদিন আগে দুর্গাপূজা উপলক্ষে একইভাবে এক সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ও চার মিলিমিটার প্রশস্থ একটি চালের দানার উপর করোনা নিধনকারী দুর্গা মূর্তি তৈরি করেছিলেন তিনি। করোনা আবহে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর কর্মহীন হয়ে একপ্রকার গৃহবন্দী হয়ে পড়েন তিনি। সেই সময় দীর্ঘ অবসরকে কাজে লাগিয়ে একের পরে এক এই ধরনের ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্র দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করেন গৌতম বাবু। ছোটবেলা থেকে শিল্পী পরিবারের বড় হয়ে ওঠার সুবাদে অঙ্কন অনুশীলনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলার মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেছিলেন গৌতম বাবু। তাঁর বাবা গোপাল চন্দ্র সাহা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। পাশাপাশি সুনামধন্য একজন গীতিকার হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার সুবাদে দীর্ঘদিন তিনি প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের সাথে একযোগে কাজ করেছেন আকাশবাণীতে। ফলে সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন একটি পরিবারের সদস্য হওয়ার কারণে শিল্প সত্তা প্রথম থেকেই প্রকাশ পেয়েছে গৌতম সাহার মধ্যে। বিগত ২৫ বছর ধরে গৌতম বাবু একের পর এক তৈরি করেছেন দেশলাই কাঠির মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেবদেবী ও মনীষীদের মূর্তি। পাশাপাশি তাঁর হাতের তৈরি সিমেন্ট,মাটি,চক ও রুল পেন্সিলের দ্বারা তৈরি একাধিক নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গৌতম বাবু বাড়ির আনাচে-কানাচে। আর সেই গুলোকে প্রতিদিন সন্তান স্নেহে রক্ষণাবেক্ষণ করেন তিনি। তাঁর এই শিল্পকলা তৈরির কাজে সংসারে বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী ঝুমা সাহা ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাঁকে সাহায্য করেন বলে জানিয়েছেন শিল্পী গৌতম সাহা। তবে নিজের শিল্পকলাকে দুনিয়ার দরবারে তুলে ধরতে সরকারি বা বেসরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি বলেও আক্ষেপ করেন এই শিল্পী। আগামী দিনে আরও নিখুঁত ও অতি ক্ষুদ্র কোন প্রতিকৃতি ফুঁটিয়ে তুলতে তাঁর একটি মাইক্রোস্কোপের খুব প্রয়োজন। সরকারি বা বেসরকারি সাহায্যে একটি মাইক্রোস্কোপের ব্যবস্থা যদি তিনি করতে পারেন তাহলে তাঁর এই শিল্পকলার কাজ অনেকটাই সহজলভ্য হবে বলে এইদিন জানিয়েছেন গৌতম বাবু। এছাড়াও ভবিষ্যতে তাঁর হাতের তৈরি শিল্প নিদর্শন নিয়ে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস বা গ্রীনিস বুক অফ রেকর্ডসের জন্য এগিয়ে যেতে চান তিনি। তাছাড়া আগামী দিনেও এই ধরনের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নতুন নতুন দৃষ্টিনন্দন প্রতিকৃতি তৈরি করে মানুষকে উপহার দিতে চান তিনি বলেও জানান শিল্পী গৌতম সাহা।