Breaking
24 Dec 2024, Tue

লাগাতার বৃষ্টি কোচবিহার সহ গোটা উত্তরবঙ্গে! বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে তিস্তা, তোর্সা সহ একাধিক নদী

প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে রাজ্যে। কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ফুঁসছে পাহাড়ি নদীগুলি। তিস্তা-তোর্ষা একাধিক জায়গায় বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। তিনদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে কার্যত জলের নিচে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং সহ উত্তরের একাধিক জেলা। তিস্তা, তোর্সা সহ একাধিক নদী ক্রমশ ফুসে উঠছে। ইতিমধ্যেই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে একাধিক নদী। ধসের আশঙ্কায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।
তিনদিনের বৃষ্টিতে জল মগ্ন কোচবিহার শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ঘাট। পাশাপাশি তোর্সা নদীর জল বাড়তে শুরু হতেই ইতিমধ্যেই কোচবিহার শহরে ঢুকতে শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও দিনহাটা, মাথাভাঙা, বক্সিরহাট-সহ বহু জায়গায় মাঠে ঘাটে জল জমে গিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ময়দানে নেমে পড়ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। বিশেষ করে তোর্সা ও মানসাই নদীর সংলগ্ন এলাকায় গুলিতে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল রাতে থেকেই বিভিন্ন জলবন্দি এলাকায় ঘুরে দেখেছেন জেলাশাসক ও পুলিস সুপার। মাইক হাতে নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করছে পুলিশ। জল বেড়েছে অধিকাংশ নদীতে।
কোচবিহারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতু হল তোর্সা সেতু। এই সেতুই দিনহাটা ও মাথাভাঙা মহকুমার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। আর এই সেতুরই বেহাল দশা এই বৃষ্টিতে। বৃষ্টির জমা জল বেরনোর কোনও রাস্তা না থাকায় জমা জলের ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে সাধারন মানুষদের। এছাড়াও কোচবিহার শহরের বিবেকানন্দ স্কুল গেটের সামনে ও রাজবাড়ি সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন রাস্তাও জলে তলিয়ে গেছে।
এদিকে বিপদসীমার উপর দিয়ে তিস্তা প্রবাহিত হওয়ায় একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নবনির্মিত জয়ী সেতুর পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবত হয়ে পড়ায় আজ সকালেই সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী।
এদিন নবনির্মিত জয়ী সেতুর পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী বলেন, এই মুহূর্তে আমরা ৭২ এর গাইট বাঁধের উপর আমরা রয়েছে। তারপাশে ওরাও ক্যাম্পে রয়েছে, কিন্তু সেই বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সাধারন মানুষের বাড়িতে গবাদি পশু গুলো ভেসে যাচ্ছে। আমরা প্রশাসন কে জানিয়েছি তারা যাতে ওই এলাকার মানুষ ও গবাদি পশু গুলিকে উদ্ধার করে রাখেন সেটা আশা রাখছি প্রশাসনের কাছে।
অন্যদিকে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই কাল রাত থেকে স্থানীয় মানুষদের মাইকে ঘোষণা করে তিস্তা বাঁধের পাশ থেকে সরে স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয়ের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০০০ লক্ষ্ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে আর তার প্রভাবেই আরও বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে।
জলপাইগুড়ির পাশাপাশি ক্রমশ ফুসে উঠছে কোচবিহারের প্রধান নদী তোর্সা। তার তার ফলে পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। তোর্সার জল এভাবে বাড়তে থাকলে কোচবিহার শহর লাগোয়া বাঁধের ক্ষতি হতে পারে। ইতিমধ্যেই জল বাড়ার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফাঁসির ঘাটের নৌকা পারাপার। তোর্সা ছাড়াও ক্রমশ ফুসে উঠছে মানসাই নদী। কোচবিহারের সীমান্তবর্তী এলাকা গিতালদহের দড়িবস ও জারিধল্লার অবস্থা খুব শোচনীয়।
এদিকে হাওয়া ভবনের রিপোর্ট অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টা আরও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে কোচবিহার জলপাইগুড়ি কালিম্পং সহ উত্তরের একাধিক জেলায়। যদি এভাবে ৪৮ ঘণ্টা ক্রমাগত বৃষ্টি হয় তাহলে উত্তরের এইসব জেলায় যে বিভীষিকাময় বন্যার সৃষ্টি হবে বর্তমানের ফুলে ওঠা নদী অন্তত তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও জেলা প্রশাসন সর্বদাই সতর্ক রয়েছে যাতে করে জীবনহানি না ঘটে।

Developed by