জেএনএফ ওয়েব ডেস্ক : একরত্তির জন্য রাত জাগল সকলে। অরণ্য শহর ঝাড়গ্রাম মানবিকতার নজির গড়ল। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল রাজ্য পুলিশও। গভীর রাতে যানজট এড়িয়ে মাত্র দু’ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিটে পুলিশের তৎপরতায় ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা পৌঁছাল মাত্র ১৮ দিনের শিশু রণদীপ সেনগুপ্ত। বর্তমানে সে ভর্তি রয়েছে হাওড়ার নারায়ণা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
ঝাড়গ্রাম শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ড বাছুরডোবার বাসিন্দা অমৃতাংশু সেনগুপ্ত। যিনি কলকাতা থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন পুস্তিকা এনে ঝাড়গ্রামে বিক্রি করেন। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে সদালাপী অমৃতাংশু সেনগুপ্ত ‘কানু দা’ নামেই পরিচিত। যাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ঝাড়গ্রামের বুড়ো’ নামেই চেনেন। তাঁর ছোট ছেলে সন্দীপ সেনগুপ্ত পেশায় টোটো চালক। সন্দীপের শ্বশুরবাড়ি ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে। আঠারো দিন আগে সন্দীপের ছেলে রণদীপ ভূমিষ্ঠ হয় গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে শিশুটির শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের এসএনসিইউতে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই চিকিৎসকা বাচ্চার পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর জানতে পারেন হার্টের সমস্যা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন প্রয়োজন। সেই মত শনিবার সকালে দুঃস্থ পরিবারের মানুষজন বাচ্চাটিকে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কলাবনি পৌঁছাতেই বিপত্তি দেখা দেয়। সংকটজনক হয়ে উঠে শিশুটির জীবন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ফের ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে ফেরত নিয়ে আসেন। বেলা এগারোট নাগাদ এহেন একরত্তির জীবন সংশয়ের কথা জানতে পারেন ঝাড়গ্রামের মানুষজন। তারপর ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে আসেন একরত্তিকে বাঁচানোর জন্য। সোশ্যাল মাধ্যমে ছবি সহ সাহায্যের আর্জি জানায় অনেকেই। কিন্তু শিশুটিকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যাধুনিক সিসিইউ অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের কর্মী চন্দন শতপথী ও শিক্ষক তমাল চক্রবর্তীর উদ্যোগে সেই অত্যাধুনিক সিসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা হয়। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা তথা কলকাতার আইসিএইচ-এর অধ্যাপক চিকিৎসক প্রভাষপ্রসূণ গিরিও যোগাযোগ করেন। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা সাগরিকা দাস, ভিকি দে, প্রতীক মৈত্র, কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনের ২০০০ সালের মাধ্যমিক ব্যাচ সহ ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা টাকা জোগাড়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদনের উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি ঝাড়গ্রামের বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও উদ্যোগী হন শিশুটির চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেন।
চন্দন শতপথী ও তমাল চক্রবর্তী বলেন,‘ঝাড়গ্রামের সর্বস্তরের মানুষজন যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তা দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগল। শহরের সমস্ত ক্লাব এবং শহরের বিভিন্ন ব্যক্তিরা মিলে একযোগে মাত্র ৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় এক লাখ টাকা মত জোগাড় করতে পেরেছি। ১৮ হাজার টাকার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রণদীপকে হাওড়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে শনিবার গভীর রাতে। রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে শিশুসাথীর মাধ্যমে অপারেশনের বিপুল খরচের জন্য। আশা করছি সোমবার সে বিষয়ে ছাড়পত্র পাওয়া যাবে।’ ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন,‘রাজ্যের ট্রাফিক কন্ট্রোল দপ্তরের সঙ্গে কথা বিভিন্ন জেলা পুলিশের সমন্বয় পুলিশের এসকর্ট দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সকে হাওড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’ একরত্তি বাচ্চার দাদু অমৃতাংশু সেনগুপ্ত বলেন,‘সকলের সহযোগিতায় নাতিকে হাওড়ার হাসপাতালে নিয়ে যেতে পেরেছি। আমাদের তো সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই। সকলে যদি এভাবে পাশে দাঁড়ান তাহলে নাতিকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে আসতে পারব।’