Breaking
1 Nov 2024, Fri

লকডাউনে বন্ধ স্কুল, দোকানের দাঁড়িপাল্লায় অঙ্ক শিখছে জলপাইগুড়ির বিদ্যাসাগর!1

জেএনএফ ওয়েব ডেস্ক : লকডাউনে বন্ধ স্কুল।সংসারের জোগান টানতে মায়ের সঙ্গে দোকানে বসে দাঁড়িপাল্লায় অঙ্ক শিখছে জলপাইগুড়ির বিদ্যাসাগর।
আট পেরিয়ে নয় এ পা।জলপাইগুড়ি হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা প্রথম ভাগই এগোয়নি জলপাইগুড়ি র বিদ্যাসাগর পাশোয়ানের।কারন অভাব। লকডাউন পর্বে পুরোপুরি ছেদ পড়েছে পড়াশোনায়। বাবা কার্যত কর্মহীন। সংসারের হাল ধরতে রাস্তায় বসে সবজি বিক্রি করেন মা।শহরের দিনবাজার সেতুর উপর ছোট্ট সবজির দোকান।সেই দোকানে মায়ের সঙ্গী বিদ্যাসাগর। দোকানে দাড়িপাল্লা আর ডিজিটাল ওজন যন্ত্রে ওজন মাপতে মাপতে ইতিমধ্যেই কেজির অঙ্ক এখন অনেকটাই রপ্ত করে ফেলেছে সে।
পড়াশোনার ইচ্ছে আছে।তবে নয়ে পা দেওয়া বিদ্যাসাগর বুঝে গেছে এই পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয়। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে আলু,পেয়াজ,পটল,ঝিঙে মাথায় করে মা সুনিতা পাশোয়ান রওনা দেন বাজারের উদ্দেশ্যে।নিজস্ব জায়গা না থাকায় সেতুর কোনায় ত্রিপোল পেতে বসতে হয় তাঁকে। সকাল সাতটা থেকে দশটা, আপাতত তিন ঘন্টার দোকানদারি।তা দিয়েই কোনও মতে চলে সংসার।ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন সুনিতা দেবী। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে দুমুঠো ভাত জোগাড় করতেই যেখানে হিমশিম অবস্থা সেখানে। কোভিড নয় সার্বিকভাবে সাধারন মানুষ পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিল জলপাইগুড়ি সদর প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ তারা এই প্রকল্পের নাম দিয়েছে পাশে আছি। সেই অসহায় পরিবারেরএকই ছেলে বিদ্যাসাগর। টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে পারছিলনা । তার বাবা কানে শোনেনা। মা ও ছেলে দুজনে মিলে জলপাইগুড়ি দিনবাজার পুলে সবজি বিক্রি করে । বিদ্যাসাগরের পাশে এবার সদর প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকা রা। তারা এই ছেলেটার সমস্ত পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছে। বিদ্যালয়ের পক্ষথেকে শিক্ষার সকল সরঞ্জাম তুলে দেওয়া হয় । স্কুলের ব্যাগ , বই খাতা পেন তুলে দেওয়া হয় বিদ্যাসাগর এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। আগে যে স্কুলে পড়াশুনা করতো সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিদ্যাসাগরের হাতে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়। যাতে ও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে।
আট পেরিয়ে নয়ে পা দিতেই কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি জলপাইগুড়ির এক নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর পাসোয়ান। করোনাকালে স্কুল বন্ধ। কার্যত লকডাউনে সংসারের খাদ্যাভাব। খাবার জোটাতে মায়ের সাথে স্বল্প পুঁজিতে সবজির ব্যবসায় হাত পাকিয়েছিল সে। দিনবাজার সেতুর ওপর অস্থায়ী দোকানে পসরা সাজিয়ে বসতো সকাল থেকে। প্রায় চুকেই গিয়েছিল পড়াশোনার পাট। এবার বিদ্যাসাগর পাসোয়ানকে সহায়তা করতে চলেছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ও সমগ্র শিক্ষা মিশন। হিন্দি হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে বিদ্যাসাগরকে ভর্তি করিয়েছেন সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা। সংসারের অর্থাভাবের কারণে যাতে বিদ্যাসাগর স্কুলছুট না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে চলেছে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। সমগ্র শিক্ষা অভিযানের প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যাসাগর পাসোয়ানকে কি কি সহায়তা করা যেতে পারে তা খতিয়ে দেখছেন জেলা শিক্ষা আধিকারিক তথা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মানবেন্দ্র ঘোষ। বিদ্যাসাগর ও তার অভিভাবকদের সাথেও কথা বলবেন তিনি। বিদ্যাসাগরের বাবা সেভাবে কোন কাজ করতে পারেননা বয়সজনিত ও শারীরিক কারণে। সংসার চালাতে মা তাই বেছে নিয়েছেন সবজির ব্যবসা। সামান্য পুঁজির ব্যবসায় মাকে সাহায্য করছিল বিদ্যাসাগর।ক্রমশ পড়াশেনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছিল সে। সংসদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, আর্থিক কারণে শিশু শিক্ষার্থী পড়া ছেড়ে দেবে এটা হতে পারেনা।সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন। বিদ্যাসাগরকে হিন্দি হাইস্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। ও যাতে পঠনপাঠন চালিয়ে যেতে পারে সেদিকে আমরা সতর্ক নজর রাখবো। পরবর্তীতে বিদ্যাসাগরের অভিভাবকদের সাথে কথা বলবেন তিনি। বিদ্যাসাগরকে কি কি সহায়তা দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানালেন মানবেন্দ্রবাবু।

Developed by