জেএনএফ ওয়েব ডেস্ক : ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারে তৃনমূল কংগ্রেসের ভরা ডুবি হলেও বাংলায় ক্ষমতায় তৃতীয়বারের জন্য আসে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু সারা বাংলা জুড়ে বিজেপির কচকচানিতে সাধারন ভোটারদের মনে একটাই ভাবনা ছিল এবার বুঝি বাংলা দখল নেবে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের স্বপ্ন ছিল ২০০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু দক্ষিনবঙ্গের সাথে সাথে উত্তরবঙ্গে শাসক দলের নেতাদের ব্যাপক খড়কুঠ কুঁড়োতে হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বের হতেই দেখা যায় বাংলায় বিজেপি ৭৭-এর গণ্ডিতে আটকে রয়েছে। যদি তৃনমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর আগেই বলে দিয়েছে বাংলায় বিজেপি তিন সংখ্যা পার করতে পারবে না। তা নিয়ে গেরুয়া নেতাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ি দেন তিনি। কিন্তু ভোটের পরে তার কথায় যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়।
কিন্তু বাংলা দখল করার স্বপ্নে বাংলার মানুষ জল ঢেলে দিলেও কোচবিহার জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের ভরা ডুবি হয়। জেলার ৯ আসনের মধ্যে ৭টি আসন দখল করে নেয় বিজেপি। আর তৃনমূলের ঝুলিতে পরে হাতেগোনা দুটি আসন। একজন সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের জগদীশ বর্মা বসুনিয়া, অপরজন মেখলিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের পরেশ চন্দ্র অধিকারী। এই জেলায় বড় বড় নেতা মন্ত্রীদের পর্যন্ত নাক কাঁটা গেছে। যদিও তৃনমূলের গোষ্ঠী কোন্দল ও জাতপাতের ফলে বিজেপির লাভ হয়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল।
তৃতীয়বার বাংলায় তৃনমূল ক্ষমতা আসিন হওয়ার পরে রাজ্যের শিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পায় মেখলিগঞ্জের তৃনমূল বিধায়ক পরেশ চন্দ্র অধিকারী। তার পর থেকেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়েছে জেলা জুড়ে। প্রত্যেকদিন তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জ, কোচবিহার, দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা, সিতাই এবং শীতলকুচি কোথাও বাদ নেই দলবদলের।
এমতবস্থায় কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত কুচলীবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের দুইজন বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী হাত ধরে তৃণমূলের যোগদান করেন। এদিন তাঁদের হাতে পতাকা তুলে দেন মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী। জার ফলে কুচলীবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে চলে আসে।
জানা গেছে, কুচলীবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই সদস্য ও সদস্যার গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয় লাভ করে। বিধানসভা ভোটে পঞ্চায়েত সদস্যা পার্বতী রায় এবং পঞ্চায়েত সদস্য অজিত শিকদার মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারীর হাত ধরে তৃনমূলে যোগদান করেন। দুই পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, আমরা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের যে উন্নয়ন তা দেখে উদ্দুদ্ধ হয়ে আজ থেকে মন্ত্রীর হাত ধরে তৃনমূলে যোগদান করলাম।
এদিন মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, শুধু আজকে নয়, ফল ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক বিজেপি-ফরওয়ার্ড ব্লক -সিপিএমের বহু কর্মী-সমর্থক নেতা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করবার জন্য যোগাযোগ রাখছেন। আমরা ভাবনা-চিন্তা করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষদের দলে যোগদান করাচ্ছি। ভবিষ্যতে আরও বেশকিছু বিভিন্ন দল থেকে আমাদের দলে যোগদান করবেন। বর্তমানের একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপির ঘর শুধু ভাঙছে আর ভাঙছে। এই ঘর আর জোড়া লাগানো সম্ভব নয় বলছেন মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী। তিনি আরও বলেন, আগামী দিনের অপেক্ষা করুন, দেখবেন আরো কত মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করে, এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। প্রসঙ্গত, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা হল ১৭টি। তার মধ্যে বিজেপি পায় ৭টি। তৃনমূল পায় ৫টি এবং সারা ভারত ফঃ ব্লক পায় ৩ এবং নির্দল পায় ২টি আসন। লোকসভা ভোটের আগে তৃনমূলের দুই পঞ্চায়েত সদস্যা যোগ দেন বিজেপিতে। তাতে মোট বিজেপির ৯ জন সদস্য হওয়ায় পঞ্চায়েত বোর্ড দখল করেন তারা। তারপর ২ নির্দল ও ৩ ফঃ ব্লকের মোট ৫ পঞ্চায়েত সদস্য তৃনমূলে যোগ দান করে। তৃনমূলের মোট পঞ্চায়েত সদস্য হয় ৮ জন। বিধানসভা ভোটের পর বিজেপি ছেড়ে আজ তৃনমূলে আসেন ২ জন পঞ্চায়েত সদস্য। তৃনমূল হল ১০ জন এবং বিজেপি ৭ জন। কার্যত ওই গ্রাম পঞ্চায়েত দখল নিল তৃনমূল কংগ্রেস।