Breaking
23 Dec 2024, Mon

কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হল ঝাড়গ্রামে লোধা-শবরের জমি তদন্ত করতে গিয়ে দেখলেন জেলাশাসক!

ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেস্ক : কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হল ঝাড়গ্রামে লোধা-শবরের জমি তদন্ত করতে গিয়ে দেখলেন জেলাশাসক! ঝাড়গ্রাম শহরের শিরিষচকের বাসিন্দা অনিল ভুক্তা গত কয়েক দিন আগে প্রথম জেলাশাসকের অভিযোগ করেছিলেন,’আমার বাবা কানাই ভুক্তার পাট্টা জমি সিপিআই পার্টির লোকেরা পার্টি অফিস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে।’ তার কিছুদিন পর সিপিআই পার্টি জেলাশাসকের অভিযোগ করে,’অনিল ভুক্তা নিজেই জমি বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। এক শ্রেণীর দালাল চক্র সেখানে জমি বিক্রি করছেন।’ এরপরই গত বুধবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরে ১ নম্বর ওয়ার্ডে কদমকানন ও শিরিষচক এলাকায় লোধা-শবরের জমি ভূমি দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে ওই এলাকায় সরজমিনে তদন্ত করতে যান ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ এবং ঝাড়গ্রামের মহকুমা শাসক তথা পুরসভার প্রশাসক সুবর্ণ রায়। তারপর যা দেখলেন তাতে কার্যত কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হল।

অনিল ভুক্তার মা বিধবা পচী ভুক্তা নিজে মাটির ঘরে থেকে পাশের ফাঁকা জমি ‘বিক্রি’ করে দিয়েছেন। পচী ভুক্তা জানিয়েছন,‘৪০ হাজার টাকায় জায়গাটি অমিতকে বিক্রি করেছি।’ রাস্তার বাম দিকে ধান জমিতে ইটের বাড়ি কার হচ্ছে খোঁজ নিয়ে জেলাশাসক জানতে পারেন ওই জমিও বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বাঁকা ভুক্তার জমিতে নতুন ঘর হচ্ছে। বাঁকার স্ত্রী গীতা ভুক্তা জেলাশাসককে জানিয়েছেন,’কিছু ছেলেকে আমার স্বামী ২০ হাজার টাকায় ধান জমিটি বিক্রি করেছিল। ওরা সেখানে ক্লাব করছে।’ এরপর হঠাৎই শবর পাড়ায় নতুন বাড়ি দেখে জিজ্ঞাসা করে জেলাশাসক জানতে পারেন, ২০০৯ সালে ঝাড়গ্রাম পুরসভা থেকে শুষনি ভুক্তাকে ওই বিনামূল্যে সরকারি পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিল। শুষনি ভুক্তা মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে গদা ভুক্তা কিছুটা দূরে অ্যাসবেসটস ছাউনি দেওয়া ঘরে এখন বসবাস করছেন। আর ওই সরকারি পাকা বাড়ি অন্য লোককে ‘বিক্রি’ করে দিয়েছেন। সেই ব্যক্তি বাড়ির মেঝেতে টাইলস, বাইরে রঙ ও রেলিং বসিয়েছেন। যদিও জেলাশাসককে গদা ভুক্তা বলেন,‘আমি ওই ঘরটি ভাড়া দিয়েছি।’ পরিবর্তনের পর রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় এসে লোধা-শবরদের বিনামূল্যে সরকারি বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে এবং চাষ করার জন্য ধান জমি পাট্টা দিয়ে তাঁদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছে। সেখানে আর লোধা-শবরদের ‘ভুল’ বুঝিয়ে এক শ্রেণির দালাল চক্র এসব কাজ করছে বলে জানতে পেরেছেন জেলাশাসক।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, লোধা-শবরদের পাট্টা জমি বা বাড়ি ‘হস্তান্তর নিষিদ্ধ’ কাগজে লেখা থাকে। এখানে কেবলমাত্র মুখে মুখে বলে কোর্ট পেপারে ‘লিখিয়ে’ কম টাকা দিয়ে তা ‘বিক্রি’ করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ জানিয়েছেন,‘শিরিষচক ও কদমকানন এলাকায় লোধা-শবরদের জমি কেনা বেঁচা নিষিদ্ধ বলে খুব শীঘ্রই সরকারি বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হবে। কারা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তা খতিয়ে দেখে শীঘ্রই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Developed by