ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেস্ক : শনিবার মাথায় ব্যাণ্ডেজের পর রবিবার মোহনপুরের বিএমওএইচ মানিক সিং এর বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম থানায় ‘হেনস্থা’ ও ‘খুনের চেষ্টার’ অভিযোগ জানালেন বিদায়ী বিএমওএইচ রণজিৎ ভট্টাচার্য। পুলিশ অবশ্য অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাও রুজু করেছে। এহেন ঘটনায় শোরগোল পড়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর ও প্রশাসনিক মহলে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের মোহনপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ রণজিৎ ভট্টাচার্যকে গত শুক্রবার মুর্শিদাবাদ জেলায় বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে বদলি করে রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তর। তাঁর জায়গায় তপসিয়া গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক মানিক সিংকে মোহনপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকারি ওই অর্ডারে দু’জনকেই দ্রুততার সঙ্গে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। শনিবার সকালে গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের তপসিয়ার বিএমওএইচ খগেন্দ্রনাথ মাহাতর অফিসের চেম্বারে চিকিৎসক মানিক সিং রিলিজ নিতে গেলে তাঁকে রিলিজ দেওয়া হয়নি। পরে ঝাড়গ্রাম জেলার এসিএমওএইচ মনোজ মুর্মু তাঁর ক্ষমতাবলে মানিক সিং কে রিলিজ করেন তপসিয়া থেকে। কিন্তু মোহনপুর হাসপাতালে এসেও শুরু হয় আরেক প্রস্থ নাটক! এখানে কাজে যোগ দিতে এলে মানিক সিং কে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি বিএমওএইচ রণজিৎ ভট্টাচার্য। উল্টে মানিক সিং ও এসিএমওএইচ মনোজ মুর্মুকে আউটডোরের ঘরের মধ্যে তালা লাগিয়ে রেখে দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন চিকিৎসক মানিক সিং। পরে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ঝাড়গ্রামের বিডিও অভিগ্না চক্রবর্তী এবং ঝাড়গ্রাম থানার আইসি পলাশ চট্টোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের দু’জনকে তালামুক্ত করেন। তারপরেও বিএমওএইচের দায়িত্ব হস্তান্তর না করে নিজের গাড়ি নিয়ে হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যান বিএমওএইচ রণজিৎ ভট্টচার্য। তখনই পুলিশের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় মানুষজনের একাংশ। তারপর ফের হাসপাতালের মধ্যে ঢোকেন রণজিৎ ভট্টাচার্য। এরপর ঘটনাস্থলে আসেন ঝাড়গ্রামের এসডিপিও অনিন্দ্যসুন্দর ভট্টাচার্য। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে অনেক বোঝানোর পরও দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় ৯ ঘন্টা পরে রাত সাতটা নাগাদ বিডিও, এসডিপিও, আইসি সকলের উপস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম জেলার এসিএমওএইচ মনোজ মুর্মু বিএমওএইচ অফিসের তালা ভেঙে নতুন বিএমওএইচের দায়িত্ব তুলে দেন মানিক সিং-কে। কিন্তু রবিবার ঝাড়গ্রাম থানায় যে অভিযোগ করেছেন সদ্য বদলি হওয়ায় বিএমওএইচ রণজিৎ ভট্টাচার্য তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জেলার স্বাস্থ্য, প্রশাসন ও পুলিশ মহলের একাংশ। বদলির অর্ডার নিয়ে কাজে যোগ দিতে গেলে ‘খুনের চেষ্টার’ অভিযোগ আসায় বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে। মোহনপুরে কাজে যোগ দিতে যাওয়ার সময় চিকিৎসক মানিক সিং এর সঙ্গে ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলার এসিএমওএইচ মনোজ মুর্মু। মানিক সিং ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হলেও এসিএমওএইচ মনোজ মুর্মুর সম্পর্কে কোন অভিযোগ করা হয়নি অবশ্য। দু’জন যদি সত্যিই একসঙ্গে ছিলেন তাহলে সেখানে একজনের নামে অভিযোগ করা হল আরেক জন কেন বাদ পড়লেন প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় মানুষজনের একাংশ। অন্যদিকে, শনিবার রাতে রণজিৎ ভট্টাচার্য ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়ে সিটি স্ক্যানও করলেও সেই রিপোর্টে কিছু ধরা পড়েনি বলে জানা গিয়েছে জেলা হাসপাতাল সূত্র মারফত। তাহলে কি মাথায় আঘাত হয়নি? আর মাথায় যদি আঘাত না হয়েই থাকে তাহলে ‘খুনের চেষ্টা’র বিষয় আসে কি করে? আর পুরো ঘটনায় বিডিও এবং আইসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকেন তাহলে কখন রণজিৎ ভট্টাচার্যকে ‘হেনস্থা’ ও ‘খুনের চেষ্টার’ করা হল এখানেও প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় মানুষজনের একাংশ!