ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেস্ক : ৬৫ কিমি পাহাড়-জঙ্গল পথে সাইকেল চালিয়ে নাতিকে হাসপাতালে এনে রক্ত দিয়ে বাড়ি ফিরলেন দিদিমা মালতী টুডু। এ কোন রূপকথার গল্প নয়! বাস্তবিক জীবন কথার এক টুকরো ছবি। সাকিন জঙ্গলমহল। ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী বেলপাহাড়ী ব্লকের কানাইসর পাহাড় ঘেরা ডডরা গ্রাম থেকে সাইকেলে চাপিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন মেয়ের ছেলেকে। শুধুমাত্র এক ইউনিট রক্ত দেওয়ার জন্য! সাড়ে পাঁচ বছরের নাতি হেমাল হেমব্রমের দশ মাস বয়সেই ধরা পড়ে থ্যালাসেমিয়া। তারপর থেকে প্রায় প্রতি মাসেই দিতে হয় রক্ত। আর এই জীবনযুদ্ধে সামিল পঞ্চাশ বছরের প্রৌঢ় দিদিমা মালতী টুডু। জামাই শ্রমিকের কাজ করত বাইরে। তাই দিনমজুর দিদিমায় নাতির দেখভাল ও হাসপাতালে নিয়ে এনে রক্ত দেওয়ার কাজ করেন। লকডাউনের জেরে রক্তের সংকট থাকায় হাসপাতালে নাতিকে ভর্তি করলে রক্ত পাওয়া যায়নি। তবে অচেনা মহিলার ফোন পেয়েও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলার তৃণমূলের সভাপরি বীরবাহা সরেন টুডু। বীরবাহাকে শুধু রক্তের কথা জানিয়ে ছিলেন মালতী। মালতী বলেন,‘রক্তটাই আমার খুব দরকার ছিল। গাড়িটা দরকার ছিল না। আমি তো সাইকেলে এসেছি। তাই গাড়ির কথা কাউকে বলিনি।’ কয়েক ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে ডোনারের সাহায্যে অচেনা মহিলার নাতির জন্য রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার প্রসঙ্গে বীরবাহা বলেন,‘মানুষ অসুবিধায় পড়ে আমাকে ফোন করেছিলেন রক্তের জন্য। আমি রক্ত জোগাড় করে দিতে পেরেছি। কিন্তু ওই মহিলাকে আমি এখনও চিনি না। উনি যে কাজ করেছেন তা স্যালুট জানানোর মত।’ আর এই রক্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামের ছাপোষা আদিবাসী মহিলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন পাশের গ্রামের রুমা মাহাত। আর এই রুমায় বীরবাহার ফোন নম্বর মালতী টুডুকে দিয়ে ফোন করতে বলেছিলেন। সাড়ে পাঁচ বছরের হেমাল রক্ত পেলেন। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ালেন পরিচিত-অপরিচিত দুই নারী। ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশের পক্ষ থেকে কুর্নিশ জানায় জঙ্গলমহলের তিন নারী মালতী-রুমা-বীরবাহাকে।