ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেস্ক :বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্য নিয়ে লজ্জা আর ভয়ের শেষ নেই! আর স্কুল জীবনে সেই সমস্যা কাকে বলবে তা নিয়ে নানা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে ছাত্রীরা। বিশেষ করে প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকার ছাত্রীদের মধ্যে সেই সমস্যা আরো প্রকট। এমনকি তা থেকেই ছাত্রীর ভবিষ্যৎ জীবনে দাঁনা বাঁধে নানা মারণ রোগ। সোমবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম জেলার কাপগাড়ি সেবাভারতী বিদ্যায়তনের আদিবাসী ছাত্রীদের নিয়ে আলোচনায় এমনই নানা কথা উঠে এল। রাজ্যের আদিবাসী দপ্তর ও কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে ‘মেন্সট্রুয়াল হেলথ ও হাইজিন’ বিষয়ক আলোচনায় যোগ দেয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কয়েক’শো আদিবাসী ছাত্রী। ছাত্রীদের কাছে এ বিষয়ে নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষিকা অফিসার তনয়া কুণ্ডু চৌধুরি, ইউনিসেফের সদস্যা সুনীতা হোতা, হলদিয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক ভুবনমোহন দাস। তনয়া কুণ্ডু চৌধুরি বলেন,‘মেন্সট্রুয়ালের সময় সাধারণ আর পাঁচটা দিনের মত স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা উচিত। এই সময়ে বেশি পরিমানে আয়রন যুক্ত খাবার যেমন পালং শাক, লাল শাক সহ নানা ফলমূল খাওয়া উচিত। পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া উচিত যাতে শরীর থেকে বের হওয়া রক্ত পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।’ সেই সঙ্গে শেখানো হয় কিভাবে মেন্সট্রুয়ালের সময় নদী, পুকুর, খাল-বিলে স্নান করতে নেই। এছাড়াও সেই সময় ব্যবহারকারী প্যাড অযথা যত্রতত্র ফেলতে নেই। তনয়া কুণ্ডু চৌধুরি বলেন,‘যেখানে সেখানে ব্যবহৃত প্যাড গুলি ফেলে দিলে তা থেকে রোগ-জীবানু ছড়াতে পারে সমাজ পরিবেশে। কারণ একটি প্যাডে যে পরিমানে কেমিক্যাল থাকে তা পরিবেশে মিশতে ৫০০-৬০০ বছর সময় লাগে। তাই ব্যবহৃত প্যাড গুলি সবচেয়ে ভালো পুড়িয়ে ফেলা বা মাটির গভীর পুঁতে দেওয়া যেতে পারে।’ ইউনিসেফের সদস্যা সুনীতা হোতা বলেন,‘মেন্সট্রুয়াল কোন শরীর খারাপ নয়, এটা একটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটা নিয়ে অহেতুক লজ্জা ও ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। মাসে ওই ৪-৫ দিন আমরা এমন ভাবে থাকি যেন আমাদের সত্যিই জীবনে শরীর খারাপ হয়েছে। আজ থেকে এই ধারনাটা পাল্টে ফেলতে হবে। ওই সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে। তাই ওই সময়ে আমাদেরকে খুবই সচেতন থাকতে হবে।’ তারপর ছাত্রীদের হাতে স্যানিটারি প্যাড,সাবান, শ্যাম্পু দেওয়া একটি করে কিডস তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক ছাত্রীকে ১২০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।এদিন আলোচনা অংশ নিয়ে নবম শ্রেণির আহাল সোরেন, দশম শ্রেণির পূর্ণিমা সিং, একাদশ শ্রেণির প্রতিমা বাস্কে, দ্বাদশ শ্রেণি আলোমনি সোরেনরা বলেন,‘আজকে অনেক নতুন বিষয় জানলাম। এই কথা আমরা গ্রামে গিয়ে আমাদের বান্ধবীদের বলব। আর স্কুলে ছোটদেরও বোঝাব।’ রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে স্কুলে স্কুলে এই সচেতনতা প্রচার করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার সম্পাদক কমলাকান্ত জানা বলেন,‘রাজ্যের ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত স্কুল ছাত্রীদের কাছে সচেতনতা প্রচার করা হচ্ছে। যাতে ছাত্রীরা তাদের গ্রামে-পাড়ায় এ বিষয়ে আরো মেয়েদের সচেতন করতে পারে।’