ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেক্স :- আগামী বছরের পুরভোট, চলতি মাসে অযোধ্যা মামলার রায়—এই দুইয়ের প্রেক্ষাপটে দলের অবস্থান ঠিক কী হবে, তা সংগঠনের সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে আজ, বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে জরুরি বৈঠকে বসছেন সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ডাকা হয়েছে দলের সব বিধায়ক, সাংসদ এবং জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের। এর আগে গত ২৯ জুলাই ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির সূচনা পর্বে দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ডেকে একইভাবে বৈঠক করেছিলেন মমতা। সেই বৈঠক পর্বে কয়েকবার অংশ নিয়েছিলেন ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরও। আজকের বৈঠকে তিনি থাকবেন কি না, তা নিয়ে জোড়াফুল শিবিরের অন্দরে জল্পনা তুঙ্গে। জনসংযোগের নতুন ধারা ‘দিদিকে বলো’ গত সাড়ে তিন মাসে ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার ‘রিপোর্ট কার্ড’ তৈরি। এদিনের বৈঠকে তা নিজের মতো ঝালিয়ে নেবেন মমতা। একইসঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভায় রদবদলের ইঙ্গিত মিলতে পারে বৈঠকে এবং তা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকেই। সাংগঠনিক স্তরে রদবদলের আভাসও মিলেছে তৃণমূল সূত্রে।
তৃণমূলের এই জরুরি বৈঠক হবে দুটি পর্যায়ে। প্রথম পর্বে জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত নির্বাচিত তফসিলি জাতির জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসবে রাজ্য নেতৃত্ব। দ্বিতীয় পর্বে থাকবেন মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে শুরু করে সমস্ত বিধায়ক এবং সংসদের দুই কক্ষের তৃণমূল সদস্যরা। সেখানেই উপস্থিত থাকবেন তৃণমূলের জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। দুটি পর্বেই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
আগামী ১৭ নভেম্বরের মধ্যে অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে। দেশজুড়ে সেই রায়কে ঘিরে জটিল আবর্ত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক মহল। এ রাজ্যে বিজেপি ইতিমধ্যেই এনআরসি ইস্যুকে সামনে রেখে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। এরকম একটা সময়ে অযোধ্যা মামলার রায়ের মতো স্পর্শকাতর প্রসঙ্গকে সামনে রেখে গেরুয়া শিবির বিভাজনকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা চালাবে বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একদিকে মমতা যেমন দিতে চাইছেন প্রশাসনিক সতর্কবার্তা, তেমনই আবার সুপ্রিমো হিসেবে সংগঠনকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে পারেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গত লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবির এ রাজ্যে নিজেদের অবস্থানকে শক্ত করেছে। নির্বাচনের সেই ফলাফলের পর্যালোচনা অনুযায়ী, একদিকে গেরুয়া শিবিরের ধর্মীয় তাস, আর অন্যদিকে দলের একটা বড় অংশের জনবিচ্ছিন্নতা, জুলুমবাজি, কাটমানি, স্বজনপোষণ এবং সর্বোপরি গোষ্ঠীকোন্দলকে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাজ্যের শাসকদল। সেই বিপর্যয় থেকে দলকে বের করে আনতে নিবিড় জনসংযোগের উপায় বাতলে দিয়েছিলেন দলনেত্রী। পেশাদারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে ‘দাওয়াই’ প্রয়োগ শুরু হয়েছিল দলের অন্দরে। সাড়ে তিনমাস পর সেই দাওয়াই কতটা উপশম করেছে, সেটাই খতিয়ে দেখতে চাইছেন মমতা। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই নবান্নের সর্বোচ্চস্তরে পৌঁছেছে কয়েকজন মন্ত্রীর ‘কাজ-কারবার’ সংক্রান্ত রিপোর্ট। তার ভিত্তিতে শাস্তির খাঁড়া নামতে চলেছে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কমপক্ষে দুই মন্ত্রীর উপর। একইসঙ্গে পদোন্নতি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের দুই মন্ত্রীর। তবে মন্ত্রিসভায় রদবদলের ইঙ্গিত মিললেও, তাতে নতুন মুখের অন্তর্ভুক্তি নেই বললেই চলে। অন্তত তৃণমূল সূত্রে তেমনটাই দাবি করা হয়েছে।
সৌজন্যে :- Bartaman