ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেস্ক: মোবাইলের যুগে এক চুটকিতেই জানা যায় সব জিনিস। গ্রাম্য পরিবেশে একদা বেতার হারিয়েছে তার পুরোনো ঐতিহ্য। আজ থেকে প্রায় ১৫-২০ বছর আগে শহর ও গ্রামের মানুষরা বসে থাকতেন আগের দিন রাত থেকেই রেডিও হাতে। কখন ঘড়িতে বাজবে ভোর ৪টা! তখন থেকেই চালু থাকত রেডিও। কখন শুনতে পাবেন বিখ্যাত গায়ক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহালয়ার সেই সুর। উল্লেখ্য যে, ১৯০৫ সালের ৪ অগস্ট উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জন্ম হয়। তার পিতা ছিলেন রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও মা ছিলেন সরলাবালা দেবী। তিনি ১৪টি ভাষা জানতেন। নিম্ন আদালতে দোভাষীর কাজও করতেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের জগতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯২৮ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একাধিক ধ্রুপদী কাহিনিকে বেতার নাট্যের রূপ দেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি যোগ দেন অল ইন্ডিয়া রেডিও-য়। ওই সময় থেকেই দুর্গাপুজো উপলক্ষে দেবী দুর্গার পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে দুই ঘণ্টার সঙ্গীতালেখ্য মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এই অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেন। আজও দুর্গাপূজা শুরু হয় এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে। আজও দুর্গাপূজার সূচনায় মহালয়ার দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটির রেকর্ড কলকাতার আকাশবাণী থেকে সম্প্রচারিত হয়।
১৯৭৬ সালে লোকে রেডিওতে রেডিও ছুঁড়ে মেরেছিল। কারন হিসেবে জানা গিয়েছে সেই বছর মহালয়ার দিনে বিখ্যাত চলচিত্র অভিনেতা উত্তম কুমারের গলায় গাওয়া রেকর্ডিং মহালয়া শোনানো হয়েছিল আকাশবানী রেডিও চ্যানেলে। উত্তাল হয়ে গিয়েছিল পুরো বাংলা। তারপর ষষ্টীর দিন আবার সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ এর গলাতেই শোলা গিয়েছিল মহালয়া অনুষ্ঠান। এই নিয়ে সম্প্রতি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত অভিনীত সৌমিক সেন পরিচালিত ‘মহালয়া’ নামে একটি ছবিও হয়েছে।
এখনো শহর থেকে প্রতন্ত্য গ্রামের মানুষ অধীর আগ্রহে সেই শুভক্ষনের প্রতিক্ষায়। সেই মহান ব্যক্তিত্বের কন্ঠস্বরে ‘মহালয়া’র আশায়। ঘরের টিভি খুলে বসে যান মহালয়ার ভোরেই। কিন্তু ঐতিহ্যের রেডিওতে মহালয়া শোনা এখন প্রায় দুষ্কর!