ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেস্ক: ফাল্গুন মাসে এসেছিল। তাই ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মা হারা হাতি শাবকটির নাম দিয়েছিলেন ফাল্গুনী। গত সাড়ে তিন বছরে চিড়িয়াখানার কর্মীদের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল সে। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে চিড়িয়াখানা চত্বরে প্রাতঃভ্রমণ না করলে খাবার মুখে রুচত না ফাল্গুনীর। চিড়িয়াখানার একমাত্র হাতিটিকে দেখার জন্য দর্শকদের কৌতুহলও কম ছিল না। সেই সাড়ে চার বছর বয়সী সাব অ্যাডাল্ট হাতি ফাল্গুনী বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক ছেড়ে পাড়ি দিল উত্তরবঙ্গের গরুমারায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। সেখানে ‘কুনকি’ হওয়ার প্রশিক্ষণ নেবে সে। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে মা হারা শাবক হাতিটিকে বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের বড়জোড়া রেঞ্জের সিধলা বিটের জঙ্গল থেকে ধরেছিলেন সেখানকার বনকর্মীরা। অসুস্থ শাবকটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে। প্রাণি চিকিৎসকদের শুশ্রূষায় আর চিড়িয়াখানার কর্মীদের আদরযত্নে সুস্থ হয়ে ওঠে ফাল্গুনী। একেবারে পোষমানা গৃহপালিতের মতো আদর খেতে অভ্যস্ত সে। চিড়িয়াখানা খোলা থাকার সময়ে পায়ে শিকল দিয়ে খুঁটিতে বাঁধা থাকত। তবে প্রতিদিন সকাল হলে ভারপ্রাপ্ত জু-সুপার জনার্দন ঘোষ আর চিড়িয়াখানার কর্মী নগেন মুর্মু, শিবপ্রসাদ মাহাতোর সঙ্গে পায়ে পায়ে চত্বরের ভিতরে ঘুরে বেড়াত ফাল্গুনী। বৃহস্পতিবার সকালেও অন্যান্য দিনের মতো প্রাতঃভ্রমণ সেরে সকাল ৯টার মধ্যে খিচুড়ি, গাজর, শশা, কুমড়ো, দু’টো কলাগাছ তারিয়ে তারিয়ে খায় ফাল্গুনী। সরকারি প্রাণি চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত ও সুলতা মণ্ডল ফাল্গুনীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ‘ফুল ফিট ফর ট্রান্সপোর্টেশন’ সার্টিপিকেট লিখে দেন। বিকালে লরিতে তোলার সময়
চিড়িয়াখানা কর্মী নগেন মুর্মু, শিবপ্রসাদ মাহাতোদের চোখে জল। ফাল্গুনীর সঙ্গে এই দুই কর্মীও এদিন গরুমারার ধুপঝরা হস্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেলেন। বিকেলে লরিতে চেপে চলে গেল ফাল্গুনী। থেকে গেল সাড়ে তিন বছরের স্মৃতি। ছলছল চোখে ভারপ্রাপ্ত জু-সুপার বলছিলেন, “হাতিরা কখনো কিছু ভোলে না। কুনকি হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের দেখলে ও ঠিক চিনতে পারবে।”