Breaking
25 Dec 2024, Wed

ইস্তাহার প্রকাশ তৃণমূলের, ১০০ দিনের কাজকে ২০০ দিনে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য

ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেস্ক : তাঁর রাজনীতি যে এবার দিল্লি অভিমুখী, বুধবার সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে প্রকাশিত ইস্তাহারে তা স্পষ্ট করে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের পাঁচ বছরের ‘ব্যর্থতার দলিল’ যেমন রয়েছে, তেমনই ক্ষমতায় এলে বিরোধীদের নিয়ে অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ‘জনগণের’ সরকারের কী ভূমিকা হবে, তারও রূপরেখা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রকাশ করেছেন মমতা। সেখানে নোট বাতিল নিয়ে তদন্ত, নীতি আয়োগ তুলে দিয়ে যোজনা কমিশন ফিরিয়ে আনা, জিএসটি পর্যালোচনা সাপেক্ষে বদল এবং একশো দিনের কাজকে ২০০ দিনে রূপান্তরিত করে ভাতার পরিমাণ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, রাজ্যের পরিসর ছাপিয়ে যে তাঁর নিশানায় দিল্লির তখত, ইস্তাহারের এই সর্বভারতীয় চরিত্রেই তা ফুটে উঠেছে। মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প বা একশো দিনের কাজ ইউপিএ সরকারের আমলে সূচিত হয়েছিল। মোদি জমানাতে ওই প্রকল্পে কর্মদিবস সৃষ্টিতে দেশের মধ্যে রেকর্ড করেছে বাংলা। মমতা বলেন, ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ক্ষমতায় এলে বছরে ২০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করার লক্ষ্য স্থির করা হবে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে এই প্রকল্পের দৈনিক ভাতা ১৯১ টাকা। তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব রয়েছে তাঁর নির্বাচনী ইস্তাহারে। মমতার বিশ্বাস, এতে সার্বিকভাবে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে সদর্থক সাড়া মিলবে। ‘দিল্লিতে আজ দরকার জনগণের সরকার’। সেই লক্ষ্যপূরণে দেশের আর্থ-সামজিক উন্নয়নে বাংলাকেই বস্তুত মডেল করেছেন মমতা। তাঁর ইস্তাহারে দেশবাসীর কাছে আবেদনের মোড়কে পিছড়ে বর্গকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা প্রসারে ক্ষমতায় এলে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া কী পদক্ষেপ করবে, তার একটা দিশা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মমতা। তাঁর ভাষায়, কন্যাশ্রীর মতো বৈপ্লবিক প্রকল্প যেভাবে রাজ্যে মেয়েদের স্কুলছুট কমিয়েছে, তাকে জাতীয় স্তরে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্য নির্ধারিত করা হয়েছে তৃণমূলের ইস্তাহারে। প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিল ঘোষণার রাতে পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে তা বাতিলের দাবি তুলেছিলেন মমতা। উল্লেখ্য, এই দাবিকে কেন্দ্র করেই তাঁর মোদি বিরোধী জেহাদ সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল। যার পুরোভাগে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং। ইস্তাহারে নোট বাতিল উত্তর পর্বে দেশের নাগরিকদের কী দুরবস্থায় পড়তে হয়েছিল, কীভাবে কর্মসংকোচন ঘটেছিল, তার বর্ণনা যেমন রয়েছে, তেমনই এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে নোট বাতিল ‘কেলেঙ্কারির’ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন। যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ চালু করেছেন মোদি। মমতা বলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই যোজনা কমিশনের প্রথম প্রবক্তা ছিলেন। অতীতে কমিশন রাজ্যগুলির সঙ্গে তার প্রয়োজন নিয়ে আলোচনা করত। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সেই ধারণাকে ভেঙে নীতি আয়োগ স্রেফ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাই তাঁদের সরকার ক্ষমতায় এলে, যোজনা কমিশন ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। জিএসটি নিয়ে নীতিগত আপত্তি তৃণমূলের ছিল না। কিন্তু মোদি সরকার একতরফাভাবে জিএসটি চালু করে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তাতেই আপত্তি মমতার। তিনি বলেন, মোদি সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। নতুন সরকার এলে জিএসটি আদৌ জনস্বার্থবাহী কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেবে। তাঁর মতে, যদি তা মানুষের মঙ্গলে লাগে, তবেই তা রাখা হবে। অর্থাৎ ব্যাপক সংস্কারই তাঁর লক্ষ্য। নতুন রাজ্য গঠন নিয়েও বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দেশের সমস্ত গ্রামে ব্যাঙ্ক শাখা থাকবে। জমি অধিগ্রহণ গায়ের জোরে করা যাবে না। বাংলার মতো দেশেও ল্যান্ডব্যাঙ্ক তৈরি করা হবে। ভারতীয় দণ্ডবিধি ব্রিটিশ আমলের আইন। আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারও সংস্কার লক্ষ্য মমতার। বাংলার ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমির’ অনুরূপ জাতীয় স্তরে আবাসন প্রকল্প নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে মমতার দিল্লিমুখী ইস্তাহারে।

Developed by