নিউজ ফ্ল্যাশ ডেক্স:- রেশন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে একইসঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্য। কারণ, গণবন্টন ব্যবস্থায় যেভাবে ভর্তুকিতে খাদ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষকে সরবরাহ করা হয়, তার আর্থিক দায় বহন করতে হয় উভয়কেই। ফলে ভুয়ো কার্ডের মাধ্যমে জিনিসপত্র পাচার হয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন প্রকৃত উপভোক্তারা সঠিক সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন, তেমনি সরকারি কোষাগার থেকেও লক্ষ লক্ষ টাকা জলে চলে যায়। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, রাজ্যের প্রতিটি রেশন দোকানেই বিশেষ ধরনের যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য, যার পোশাকি নাম ই-পিওএস বা ইলেকট্রনিক পয়েন্ট অব সেল। এর মাধ্যমে কোন গ্রাহক ঠিক কী কী খাদ্যদ্রব্য তুললেন, তার হিসেব যেমন তাঁর কাছে থাকবে, তেমনি তা সরাসরি চলে যাবে খাদ্য দপ্তরের মূল সার্ভারেও। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২০ হাজারেরও বেশি রেশন দোকানের কর্মকাণ্ড এক ক্লিকেই দপ্তরের হাতের মুঠোয় চলে আসবে। এর জন্য ইন্সপেক্টর পাঠিয়ে দোকানে দোকানে হিসেব পর্যবেক্ষণের যেমন দরকার পড়বে না, তেমনি ঘুষের বিনিময়ে হিসেবে গরমিল করার অভিযোগও উঠবে না। রাজ্য খাদ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এখনও পযর্ন্ত ছ’টি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ৩৫০টি দোকানে এই যন্ত্র বসানো হয়ে গিয়েছে। এবং তার ফলও হাতেনাতে মিলেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব দোকানেই তা বসানো হবে। ২০ হাজারের মধ্যে ১৫ হাজার দোকানে যন্ত্র বসানোর বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকি পাঁচ হাজার মেশিনও আগামী মে মাসের মধ্যে বসে যাবে বলে জানানো হয়েছে। রাজ্যে এখন রেশন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৮৭ লক্ষ। সবার হাতেই এখন ডিজিটাল কার্ড। এই বিরাট সংখ্যক গ্রাহক মোট তিনটি প্রকল্পের মধ্যে পড়েন। কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প, রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প এক এবং দুই। খাদ্য দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প দুই নিয়েই সমস্যা বেশি তৈরি হচ্ছে। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পে রেশন গ্রাহকের সংখ্যা ১ কোটি ৩৯ লক্ষ। কিন্তু অনেকেই নিয়মিত খাদ্যসামগ্রী তুলছেন না। অথচ এই প্রকল্পে মাসে মাথাপিছু ১৩ টাকা কেজি দরে চাল এবং ৯ টাকা কেজি দরে গম পাওয়ার কথা। এই দুটি জিনিসেরই বাজারমূল্য অনেক বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এক শ্রেণীর রেশন ডিলার এসব কালোবাজারে বিক্রি করে মোটা টাকা মুনাফা লুটছেন, এমন অভিযোগও দপ্তরের কানে এসেছে। অন্য প্রকল্প নিয়েও এই ধরনের অভিযোগ কমবেশি সবসময়ই ওঠে। আরও একটি খবর সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। বহু মৃত ভোটারের কার্ড ব্যবহার করেও মোটা অঙ্কের মালপত্র রেশন থেকে তুলে বাজারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার তদন্ত শুরু করে। তাতে এখনও পর্যন্ত এমন প্রায় ৮ লক্ষ কার্ডের সন্ধান মিলেছে। সব মিলিয়ে একটা বিষয় ক্রমশ দপ্তরের কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে, রেশনের সামগ্রী নিয়ে কালোবাজারি, দুর্নীতি গোটা রাজ্যকেই গ্রাস করে ফেলেছে। এমন একটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে রাজ্য নিমরাজি থাকলেও পরে যে ওই ধরনের মেশিন বসিয়ে সমগ্র ব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার পথে এগচ্ছে, তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। যদিও একটি বিষয়ে এখনও কিন্তু ফাঁক রয়ে গিয়েছে। তা হল, কেন্দ্র চাইছে, ওই যন্ত্রে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক পরীক্ষার পরই তা কার্যকর হবে। যার একমাত্র উপায় আধার কার্ড। সোজা কথায়, যে কোনও গ্রাহক প্রথমে ওই যন্ত্রে আঙুল ছাপ দিয়ে নিজের পরিচয় প্রমাণ করতে পারলে তারপরই কার্ড পাঞ্চ করার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ, একজনের কার্ড নিয়ে অন্যজন রেশন তুলে নেবেন, সেই সুযোগ থাকবে না। কিন্তু রাজ্য সেই আধার সংযুক্তি করণের বিষয়টিতে এখনও পর্যন্ত সায় দেয়নি। ফলে পুরো ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেকটাই স্বচ্ছ হলেও দুর্নীতির জায়গা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে।