নিউজ ফ্ল্যাশ ডেক্স:- যুবতীর পেশা বিয়ে করে প্রতারণা করা। তার ডজন খানেক স্বামীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ঠকবাজি করতে নানা নামেও পরিচিত। তবে পলি নামেই বেশিপরিচিত।কখনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো তিনি চিকিৎসক। এমন পরিচয়ে একের পর এক বিয়ে করেছেন।
সর্বশেষ ঢাকার অদূরে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ ব্যাচ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ৩৬তম বিসিএস এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে উত্তরায় এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে ধরা পড়ে যান তিনি। এখন জেলহাজতে।
অভিনব প্রতারণার গল্প সাজিয়ে একের পর এক বিয়ে করাই ছিল পলির কাজ। চালচলনে এতটাই স্মার্ট তিনি আগে কখনো বিয়ে করেছেন তা বোঝার কোনো উপায় থাকত না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন বলে পরিচয় দিলেও আদৌ কখনই তিনি সেখানে পড়েননি। পুলিশ তার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য জেনে হতবাক।
পলি নিজেকে শাহনুর রহমান সিক্ত ওরফে সিক্ত খন্দকার ওরফে তাহামিনা আক্তার পলি ওরফে তামিমা আক্তার পলি নামে পরিচয় দিয়ে চলেন। স্মার্ট চলাফেরা আর মৌখিক ইংরেজি সুনিপুণভাবে রপ্ত করে অভিজাত চলাফেরা দিয়ে ভদ্র পুরুষ সাধারণকে প্রতারণার জালে আটকানোই ছিল তার মূল লক্ষ্য। গত ২ ফেব্রুয়ারি তার নামে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়।
পুলিশ জানায়, উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ প্রতারক যুবতীকে আটক করার পর চাঞ্চল্যকর প্রতারণার সব তথ্য বেরিয়ে আসে। শাহনুর রহমান সিক্তর মোবাইল থেকেই ফেসবুকের মাধ্যমে তার পূর্বের চলমান স্বামীর মেসেজ থেকে এসব তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রনেতা যার সঙ্গে ২ বছর আগে এমন অভিনব গল্প সাজিয়ে বিয়ে করে।
বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি)র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন বেশ কয়েক বছর আগে এই সিক্ত খন্দকার নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সাভারের স্থানীয় এক যুবককে বিয়ে করে। কিছুদিন পর তার আসল পরিচয় জানা গেলে ওই যুবক পিএটিসিতে অভিযোগ করলে প্রতারক মহিলাকে পিএটিসি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখানেই থামেনি সিক্তর প্রতারণা বরং কৌশলও নিপুণতাকে বাড়িয়ে সে অভিনব প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে আরও একের পর এক বিভিন্ন নামে সে বিয়ে করে এবং বিভিন্ন সরকারি চাকরির লবিং করিয়ে দেওয়ার নামে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে কোটি টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়। প্রথমে তার ফুফাতো ভাই শেখ শাহীন উল্লাহর সঙ্গে সিক্তর বিয়ে হয়। শাহীন উল্লাহর ঔরসে তানজানুল ইয়াফ রাফি (ডাক নাম মাহিন) নামে ১৪ বছরের একটি ছেলে আছে। অথচ প্রত্যেক বিয়ের সময়ই সে নিজেকে কুমারী পরিচয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে বিবাহ করেছে।
সিক্ত খন্দকার নিজেকে সমাজের অতি উচ্চ শ্রেণির সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী তরুণী অফিসার হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। আর এ জন্য যেসব কৌশল প্রয়োজন হয়, তার সবই তিনি রপ্ত করেছেন বিগত ১০/১২ বছরে। তিনি পরিচয় দেন, তার মা আনোয়ারা বেগম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় ব্যাচ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন, বর্তমানে পিএটিসির ট্রেনিং ডিরেক্টর, ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ পাস করে বর্তমান বিপিএটিসির ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর, বড়বোন পিজি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বড় ডাক্তার। দুলাভাই ইঞ্জিনিয়ার, একমাত্র চাচা আর্মির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং সাবেক এক মন্ত্রী তার আপন মামা। আর নিজের চারটি ফার্স্ট ক্লাস। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্রী।
পুলিশ পরে জানতে পারে, তার মা বিপিএটিসির ডরমেটরির আয়া, বাবা ছিলেন পিএটিসির ড্রাইভার রুপাই বেপারী। রুপাই বেপারী অকালে মারা গেলে পিএটিসির কর্তৃপক্ষ তার মাকে আয়ার চাকরিটা দেন। পরিবারে অন্য আত্মীয়দের দেওয়া পরিচয়ও সব ভুয়া। নিজে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে মাত্র। পিএটিসির কর্মচারী কোয়ার্টারে মায়ের সঙ্গে থাকার সুবাদে বিসিএস ক্যাডারদের ট্রেনিংয়ের সময় কৌশলে সে সব জেনে নিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদের সঙ্গে নিজেকে মানানসই করে রপ্ত করে ফেলে সে ইংরেজি বিভাগের ৩৮ ব্যাচের অনার্স-মাস্টার্সের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। জাবির ভিসি প্রোভিসি থেকে শুরু করে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্রনেতা-নেত্রীর প্রায় সবাইকে নানা কৌশলে চিনে ফেলে এবং ফেসবুকে জাবিয়ানদের কাছে সে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থীর মতোই পরিচিত হয়ে ওঠে। জাবির বিভিন্ন ব্যাচের রিইউনিয়নে তার সরব উপস্থিতি থাকে। সে ফেসবুকে জাবির ৩/৪ হাজার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড গড়ে তোলে। এভাবে সর্বশেষ করে এক লেখক গবেষক ও শিক্ষক যিনি নিজে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন, যাকে বিয়ের নামে তার আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়।