পূর্ব পুরুষদের পরম্পরা মেনে আজও চৌধুরী পরিবারে পূজিত হন সিংহবাহিনী দুর্গা

সিংহবাহিনী দুর্গা



পশ্চিম মেদিনীপুর : বাঙালির কাছে দুর্গা পুজো একটি শ্রেষ্ট উৎসব। শতাব্দী প্রাচীন সময় থেকে বাঙ্গালীরা এই পুজো করে এসেছে । এখন এই পুজো তে ক্লাব ,সংগঠন জড়িত হয়ে পুজো র পরিমান বেশি হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনো ইতিহাস ঘাঁটলে বেশ কিছু ইতিহাস জড়িত বনেদি বাড়ি কিংবা মন্দিরের পুজো লক্ষ্য করা যাবে। তেমন ই এক ইতিহাস জড়িত পূজার উদাহরণ হলো পশ্চিমদিনীপুর জেলার অন্তর্গত আনন্দপুর থানার চৌধুরী পরিবারের পুজো।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কর্ণগড় মহামায়া মন্দির থেকে প্রায় 20 কিমি দূরে একটি ছোট্ট গ্রাম নাম তার পাচরা,সেখানেই হয় এই চৌধুরী পরিবারের দূর্গা পুজো।সেখানে এই পুজোতে মাটির তৈরী প্রতিমা কে পুজো করা হয়না। পূর্ব পুরুষ দের আমল থেকে অষ্টধাতু দিয়ে তৈরী দেবী সিংহবাহিনী দূর্গার মূর্তি এখানে পূজিত হন। শুধু দুর্গাপুজো নয় বছরের অন্যান্য দিন গুলিতেও এই মূর্তিকে এই পরিবারের সদস্যরা নিজেদের কুলদেবী হিসেবে পুজো করে থাকেন।এই পরিবারের পুজো কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা অজানা। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন মায়ের পুজোর জন্য পূর্ব পুরুষেরা এখানে পাশাপাশি দুটি মাটির মন্দির তৈরী করেছিলেন কিন্তু বেশ কিছু বছর হলো তা সংস্কার করা হয়েছে।একটি মন্দিরে বছরের অন্যান্য দিন পুজো হলেও দূর্গা পুজোর চারটি দিন আবার অন্য্ একটি মন্দিরে মায়ের পুজো হয়ে থাকে। ষষ্ঠীর দিন বেলতলায় মায়ের অধিবাস হয়ে থেকে এবং পরের দিন অর্থাৎ সপ্তমীর দিন সকালে নিকটবর্তী একটি প্রতিষ্ঠা পুকুরে ঘট ডুবিয়ে সেই ঘট গুলিতে জল এনে মায়ের পুজো শুরু হয়। উল্লেখ্য যে ঘটে গুলি জল আনার জন্য ব্যবহার করা হয় সেই ঘট গুলি এখানে মাটির ঘট ব্যবহার না করে পিতলের ঘট ব্যবহার করা হয়। অতীতের সময় থেকেই চারজন ব্রাহ্মণ চারটি ঘট নিয়ে নিকটবর্তী পুকুর থেকে জল নিয়ে এসে এই পুজো শুরু করে থাকেন।অষ্টমীর দিন পরিবারের সবাই সহ আত্মীয়রা নতুন বস্ত্র পরিধান করে অঞ্জলি দেন। এই পরিবারের পুজোতে একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো এখানে সন্ধি পুজোর সময় ছাগ বলির রীতি প্রচলিত আছে যা পূর্ব পুরুষদের সময় থেকে চলে আসছে বলে জানাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও আবার নবমীর দিন পুনরায় ছাগ বলি হয়ে থাকে। এই পরিবারের পুজোতে ছাগ বলির পাশাপাশি চালকুমড়ো এবং আখ বলির প্রথা ও চালু আছে। দুর্গা পুজোর সময় যে চার দিন পুজো হয়ে থাকে সেই পুজো গুলি নির্দিষ্ট তিথি মেনেই হয়ে থাকে। এমন কি সন্ধি পুজো তে যে ছাগ বলি এছাড়াও অন্যান্য যে সমস্ত বলি হয়ে থাকে সেগুলিও নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনেই এখানে করা হয়।
চৌধুরী পরিবারের সদস্য সৌমেন চৌধুরী বলেন ” আমাদের কাছে এটা শুধু পুজো নয় এটা আমাদের কাছে নিজেদের মধ্যে একপ্রকার পারিবারিক মিলনের উৎসব। সারা বছর এই পরিবারের যে সমস্ত সদস্যরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন তাঁরাও এই সময় নিজেদের গ্রামে ফিরে এসে পরিবারের সকল সদস্য দের সাথে এই মিলনের উৎসবে মিলিত হন। আমরা আমাদের বয়জ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে তথা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে বিভিন্ন পূজোর নিয়ম কানুন শিখে চলেছি এমনকি তাদের নিয়মে আমরা এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছি। “

Recent Posts

স্নান করতে নেমে বিপত্তি, ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও তলিয়ে যাওয়া যুবকের মিলল না কোন সন্ধান!

অরূপ কুমার মাজী, জেএনএফ, সরডিহা : বন্ধুদের সাথে স্নান করতে নেমে কংসাবতী নদীর জলে তলিয়ে গেল এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে…

1 month ago

শরীর সায় দিলে ‘দিদি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ! অনুগামীদের ভিড়, বাড়ির কার্যালয়ে বসে কেঁদে ফেললেন অনুব্রত

দুই বছরেরও বেশি সময় পরে বীরভূমে ফিরলেন অনুব্রত মণ্ডল। প্রথমে আসানসোল সংশোধনাগারে এবং তার পর প্রায় দেড় বছর দিল্লিতে তিহাড়…

1 month ago

‘সঞ্জয় লীলার কোনও নীতি আদর্শ নেই!’ পরিচালকের বিরুদ্ধে কেন ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন করিনা?

করিনার সৌন্দর্যে প্রথম থেকেই মুগ্ধ ছিলেন পরিচালক। ‘হম দিল দে চুকে সনম’ ছবির জন্য তাঁর প্রথম পছন্দ ছিলেন করিনাই। কিন্তু…

1 month ago

মিছিল করে মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ স্কুল পড়ুয়াদের! শোকজ় নোটিস পেয়ে ক্ষোভ একাধিক জেলায়

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলে কচিকাঁচা পড়ুয়ারা পা মেলিয়েছে কেন? এই প্রশ্ন তুলে রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুলকে শোকজ় নোটিস পাঠিয়েছে শিক্ষা…

2 months ago

বালি মজুত করার অভিযোগ পেয়ে শুকজোড়া এলাকায় ভূমি অধিকারীকের হানা!

জেএনএফ, চুবকা : অবৈধভাবে বালি মজুত করার অভিযোগ পেয়ে ঝাড়গ্রাম ব্লকের শুকজোড়া এলাকায় মানিকপাড়া বিট হাউসের পুলিশকে সাথে নিয়ে হানা…

3 months ago